প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত?
প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত? তা সম্পর্কে আজ আমার জানবো। আমরা অনেকেই জানিনা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে আমাদের কি করতে হবে।প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধ সম্পর্কেও জানা দরকার। আপনি যদি প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে কি কি থাকা উচিত এবং প্রাথমিক চিকিৎসা কি ইত্যাদি অনেকের কাছে শুনতে চেয়েছেন কিন্তু সঠিক তথ্য দিতে পারে নাই।
ভূমিকা
অনেকে আছে যারা নানা কারণে দুর্ঘটনায় পড়ে। ফলে তাৎক্ষণিক কিছু চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। যেটাকে আমরা বলি প্রাথমিক চিকিৎসা এই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আমাদের অনেক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারি। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এই প্রাথমিক চিকিৎসার সম্পর্কে আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরব। আমাদের জানা দরকার প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত?
একটি প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে কি কি থাকা জরুরী তা সম্পর্কে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো। অবশ্যই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন এবং অনেক কিছু জানতে পারবেন চলুন প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স কি
আমরা বাড়িতে অথবা রাস্তায় কখনো কখনো দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। ছোটখাটো দুর্ঘটনার কবলে পড়ার কারণে আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেমন বাড়িতে গরম পানি, আগুন, বৈদ্যুতিক শক, ধারালো জিনিস ব্যবহার করার কারণে দুর্ঘটনা হয়। হাত কেটে যায় দাঁড়ানোর জিনিসের ব্যবহারের জন্য। গরম পানি শরীরে ঢেলে ঢেলে গেলে। সেই সাথে জানতে পারি প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত?
আগুন শরীরে লাগলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তাই এই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। তাই এই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ছোট একটি বাক্স চিকিৎসার উপকরণ গুছিয়ে রাখতে পারেন। যা পরিচিত হিসাবে আমরা জানি এটার নাম ফার্স্ট এইড বক্স। অবশ্যই এটি হাতের নাগালে রাখতে হবে।তবে শিশুদের নাগাল হতে উঁচু স্থানে রাখতে হবে। এই ছোট্ট একটি বক্সের মধ্যে আপনি চিকিৎসার ওষুধ পত্র যাবতীয় রাখতে পারেন। এতে আপনার অনেক উপকার হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা কি
আমরা বাড়িতে অনেক কাজ করি এবং রাস্তাঘাটে চলতে অনেক দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। আমরা দুর্ঘটনা কবলে পড়ার পরে যাতে অবস্থা খারাপের দিকে না যায় যদি অবস্থার অবনতি ঘটে তার জন্য ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে যে চিকিৎসা প্রদান করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে। প্রাথমিক চিকিৎসার ফলে জীবন রক্ষা হয়, রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করা যায়, প্রাথমিক চিকিৎসার হলে রোগী প্রাথমিক সুস্থতা অনুভব করতে পারবে।
তার জন্য আমাদের অবশ্যই জানতে হবে প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত?
এতে আহত রোগী অনেক উপকৃত হবে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আমাদের দেশে মাঝে মাঝেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। যেমন ভূমিকম্প, ঝড়, বন্যা, বড় বড় দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড হয়ে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন মানুষ আহত হয়।
এই আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া কে বলা যায় প্রাথমিক চিকিৎসা।
তাই প্রাথমিক চিকিৎসার সম্পর্কে আমাদের সকলের কিছু না কিছু জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিটি নাগরিকের উচিত প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।
প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত?
আমাদের আশেপাশে অনেক দুর্বল সর্বপ্রথম যে সহযোগিতা প্রদান করা হয় বা সেবা প্রদান করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে। একটি প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত? সে সম্পর্কে অনেকে জানতে চায় তাহলে জেনে নেয়া যাক প্রাথমিক চিকিৎসা বক্সে কি কি থাকা উচিত?
চিকিৎসা বক্সে যা থাকবে
- অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ (স্যাভলন, ডেটল, পোভিডন, আয়োডিন দ্রবণ)।
- অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম।
- প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও গ্যাস্টিকের ওষুধ।
- মাঝারি আকারের কাপড়।
- দুই তিন কোনা বড় কাপড়।
- থার্মোমিটার।
- ক্রেপ ব্যান্ডেজ।
- স্টেথোস্কোপ ও রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখা যেতে পারে।
- পোড়া জায়গায় লাগানোর মলম (যেমন সিলভার সালফাডায়াজিন এক পারসেন্ট ক্রিম যা শুধু বাহ্যিক ব্যবহার্য)।
- কয়েক প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন।
- ব্যান্ডেজ (ছোট ব্যান্ডেজের স্ট্রিপ ফার্মেসি দোকানে কিনতে পাওয়া যায়)।
- তুলা, গজ, কাঁচি।
- পানি, বরফ,মাঝারি আকারের শক্ত কাঠ,চিনি বা গ্লুকোজ।
- মাইক্রোপোর (সাদা রঙের পাতলা একটি জিনিস, যা স্কচটেপের মতো আটকানো যায়)।
প্রাথমিক চিকিৎসার নিয়ম গুলি কি কি
এখন আমরা জানবো প্রাথমিক চিকিৎসার নিয়ম গুলো কি কি চলুন। আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার কিভাবে করব তার নিয়ম সম্পর্কে জানি। প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে কি কি থাকা উচিত? তার জন্য নিম্নে বলা হলো কি করতে হবে।
হঠাৎ কেটে গেলে
- হঠাৎ কেটে গেলে সাধারণত রক্তপাত হয়ে থাকে। তাই অতিরিক্ত রক্তপাত হলে ক্ষতস্থানটি চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে। বেশি নড়াচড়া করলে রক্তপাত বাড়তে পারে। রক্তপাত বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে পরিষ্কার তুলা বা গজের সাহায্যে এন্টি সেপটিক দ্রবণ দিয়ে ক্ষত স্থান পরিষ্কার করতে হবে। তারপরও যদি অতিরিক্ত রক্তপাত হয় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
গরম পানি শরীরে ঢেলে পরলে করণীয়
- গরম পানি শরীরে পড়লে কোন কিছুর ছেকা লাগলে বা তাপ লাগলে আক্রান্ত স্থান টিউবলের পানির নিচে রাখুন অন্তত ৩০ মিনিট। এরপর মলম লাগিয়ে রাখুন। বারবার আক্রান্ত স্থানে চামড়ায় মলম লাগিয়ে রাখবেন না। দিনে ২-৩ বার মলম লাগিয়ে রাখুন।গোসলের সময় ধুয়ে ফেলবেন সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
হঠাৎ আঘাত পেলে করণীয়
- হঠাৎ আঘাত পেলে সেই স্থানে বরফ অথবা ঠান্ডা পানির বোতল দিয়ে চেপে ধরে রাখতে হবে। তবে এগুলো সরাসরি ব্যবহার করবেন না পরিষ্কার কাপড়ের পিছিয়ে দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এরপর ব্যথা নাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে অথবা প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে আঘাত প্রাপ্ত স্থানে বরফ অথবা ঠান্ডা পানির বোতল চেপে ধরে রাখলে অনেকটাই ব্যথা কমে আসে।
বিদ্যুৎ শক পেলে করণীয়
- কেউ যদি বিদ্যুতের শক পেতে দেখেন প্রথমত নির্দিষ্ট সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। অথবা বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধু করে দিতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তাহলে লাঠি দিয়ে তাকে শক থেকে বিছিন্ন করতে হবে। এরপর তাকে মাটিতে সুয়ে কাত করে দিতে হবে। যদি সমস্যা হয় তার ঠোঁট ভেজা কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবসা ব্যবস্থা করতে হবে।
পুড়ে গেলে করণীয়
- প্রথমত পুড়া অংশটি ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ জ্বালা না কমে ততক্ষণ আস্তে আস্তে পানি পুরা স্থানে ঢালতে হবে। যদি পোড়া অংশটি ফোসকা পড়ে যায় তাহলে এক টুকরা কাপড় দিয়ে জায়গাটি ঢেকে রাখতে হবে। ফোসকা ফাটানো যাবে না। যদি ফোসকা পড়ে যদি অবস্থা গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বার্ণ ক্রিম ছাড়া কোন প্রকার লোশন ক্রিম জায়গায় লাগানো ঠিক নয়।
চোখে ময়লা পড়লে করণীয়
- চোখে ময়লা পড়লে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখতে হবে যে চোখের পানিতে ময়লাটি ধুয়ে যায় কিনা। যদি না যায় তবে চোখে পানি ছিটিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতেও যদি ময়লা না যায় তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোতে এনে হাত দিয়ে আলতো ভাবে চোখের পাতা দুটি পৃথক করতে হবে। যদি ময়লা দেখা যায় তবে পরিষ্কার রুমাল অথবা কাপড় দিয়ে চোখের কোনায় এনে বের করতে হবে। যদি এ পদ্ধতি বের করা না যায় তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধ
যেকোনো দুর্ঘটনা কবলীত ব্যক্তির জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের অবশ্যই জানা দরকার প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধ কি। সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসায় দুর্ঘটনা কবলিত আহত ব্যক্তি অনেক উপকারী হবে এবং অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে। ভুলভাল প্রাথমিক চিকিৎসায় আহত ব্যক্তির প্রাণঘাতী হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত স্বাস্থ্য বিষয়ে কিছু ওষুধ পত্র নাম জানা যা প্রাথমিক চিকিৎসার সময়ে অনেক প্রয়োজনীয়। তাহলে এবার জানা যাক প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধ সমূহ।
- Napa অথবা Ace = জ্বর শরীর ব্যথার জন্য।
- Fexo অথবা fenadin 120 mg =হাসি সর্দি এলার্জির কারণে চোখ শরীর চুলকালে।
- Brofex সিরাপ= শুকনো কাশি।
- Ambrox সিরাপ= পাকা কফ।
- Imotil= পাতলা পায়খানা ডায়রিয়া।
- Flagyl= আমাশয়।
- Burna 1% মলম= পুড়ে গেলে।
- Viodin 5% মলম= কাটাস্থানে।
- Tory অথবা Etorix 120 mg= দাঁত ব্যথা, কান ব্যথা থেকে ৩০ মিনিটের ভেতর মুক্তি।
- Tufnil 200 mg= খুব মাথাব্যথা করলে।
- Algin 50 mg = যে কোন পেট ব্যথায়।
- Milk of magnesia সিরাপ= পায়খানা কষা হলে ৩ চামচ খেয়ে দুই গ্লাস পানি খাবেন। ১৫ মিনিটে পায়খানা নরম হবে যাদের কয়েক দিন ধরে পায়খানা হয় না, তাদের জন্য আরও দরকারি এটা।
- ওরস্যালাইন= পাতলা পায়খানা, বেশি ঘামলে, পেশার লো হয়ে গেলে।
- Sergel অথবা Pantonix= গ্যাস্টিকের জন্য।
দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয় কেন?
মানব দেহ আঘাত অসুস্থতা এবং দুর্ঘটনা একটি সংবেদনশীল বিষয়। যা হয়ে থাকে আমরা জানি না আমাদের কখন নিজের বা আমাদের আত্মীয়-স্বজন ভালবাসার লোকদের চারপাশের লোকদের কখন কিভাবে আঘাত আসতে পারে। কখন কি দুর্ঘটনা হয় আমরা জানি না। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের আত্মীয়-স্বজন এবং আমাদের প্রিয় মানুষরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে প্রথমত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া। এতে করে আহত ব্যক্তি মরণের হাত থেকেও বেঁচে যেতে পারে। সঠিক নিয়ম এবং সঠিকভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া উচিত যখন দুর্ঘটনা ঘটে। তখন পেশাদার চিকিৎসক সেখানে নাও উপস্থিত থাকতে পারে।
তাই আমরা ছোটখাটো চিকিৎসা দিতেই পারি। যেমন ব্যান্ডেজ করা একজন আহত ব্যক্তির রক্তপাত বন্ধ করার উপায় জানতে পারে এবং সে উপায়টি প্রয়োগের ফলে তার জীবনও বাঁচানো সম্ভব। একজন পেশাদার চিকিৎসকের যাওয়ার আগেই আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারি। এর জন্য এর জন্য আশেপাশে কেউ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকতে পারে। তার থেকে শুনে পরিস্থিতিতে আহত ব্যক্তির যত্ন নেওয়া যেতে পারে। এভাবেই দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক যদি আমার এই কন্টেন্ট ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। এতে আপনার বন্ধুরা উপকৃত হবে। প্রতিদিন আমার ওয়েবসাইটে সাথে থাকুন এবং আমার ব্লগার পড়ুন। এটা আপনার অনেক অজানা তথ্য জেনে যাবেন এবং অনেক উপকার হবে।
মা টেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url